{getBlock} $results={3} $label={রাজনীতি} $type={headermagazine}

হাত ধুতেই জনপ্রতি খরচ হয় ৩১ হাজার লিটার পানি

বাংলাদেশে পানি অপচয়, বনভূমি ও কৃষিজমি হ্রাসে alarming তথ্য। বিবিএস জরিপ অনুযায়ী হাত ধোয়ায় বছরে ৩১ হাজার লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। পরিবেশ সংকটের ভয়াবহতা।
প্রকাশঃ
অ+ অ-

পরিবেশগত বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) 'পরিবেশ, পরিবর্তন ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ প্রকল্প'-এর 'হাউজহোল্ড বেজড এনভায়রনমেন্টাল সার্ভে (এইচবিইএস) ২০২৪'-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে পানি অপচয় এবং বনভূমি হ্রাসের চিত্র ভয়াবহ। এই জরিপটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পরিচালিত হয়েছে, যা পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

হাত ধোয়ায় বছরে ৩১ হাজার লিটার পানি অপচয়

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, হাত ধোয়ায় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার বাংলাদেশে পানি অপচয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে গড়ে প্রায় ৩১ হাজার ৩২ লিটার পানি শুধু হাত ধোয়ার জন্য ব্যবহার করেন, যার আনুমানিক খরচ ৯৮১ টাকা। এই অপচয়ের চিত্র গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় এলাকায়ই বিদ্যমান। গ্রামে যেখানে একজন ব্যক্তির হাত ধোয়ায় ৩১ হাজার ১৮৪ লিটার পানি খরচ হয়, সেখানে শহরে এই পরিমাণ কিছুটা কম হলেও ৩০ হাজার ৬৮৩ লিটার, যা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। টাকার অঙ্কে, গ্রামে এই খাতে বছরে ব্যয় হয় ৮৩১ টাকা এবং শহরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩১১ টাকায়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যদি এই হারে পানি অপচয় চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পানি সংকটের মুখে পড়তে হবে। প্রতিদিন গড়ে ৭২ লিটার পানি অপচয় করা হচ্ছে, যা আমাদের নিজেদের সম্পদ ধ্বংসের শামিল।

বনভূমি ও কৃষিজমির উদ্বেগজনক হ্রাস

শুধু পানি অপচয় নয়, দেশের বনভূমি ও কৃষিজমিও আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এইচবিইএস ২০২৪-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী:

  • বনভূমি হ্রাস: গত ৮ বছরে দেশে বনভূমি কমেছে ৫.৫৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে দেশের বনভূমির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৪৯৯.০৮ বর্গকিলোমিটার (১২.৫৪%), যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৮.১৮ বর্গকিলোমিটারে (১১.৮৬%)। এটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
  • কৃত্রিম বনায়ন বৃদ্ধি: সার্বিকভাবে বনভূমি কমলেও, কৃত্রিম উপায়ে সৃজিত বনভূমির পরিমাণ বেড়েছে ২৭.৩৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে এ ধরনের বন ছিল ১ হাজার ৩৪১.৪৮ বর্গকিলোমিটার, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ১ হাজার ৭০৮ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। এটি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও, প্রাকৃতিক বনভূমি হারানোর ক্ষতি পূরণ করতে পারছে না।
  • কৃষিজমি সংকোচন: কৃষি জমিও কমেছে ১.৯৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে দেশে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩৮৬.৬৩ বর্গকিলোমিটার, যা ২০২৩ সালে কমে ৭২ হাজার ৯১৫.৭৪ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। কৃষিজমি কমে যাওয়া খাদ্য সুরক্ষার জন্য একটি বড় হুমকি।

নীতি নির্ধারণে তথ্যের গুরুত্ব

বিবিএস-এর এই জরিপের তথ্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বক্তারা। সচিব আলেয়া আক্তার বলেন, এই তথ্যগুলো পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত সঠিক নীতিনির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ অতিথি ড. এ কে এনামুল হক পরিবেশগত সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, "আমরাই আমাদের সম্পদ ধ্বংস করছি। কৃষি জমিতে এখন জিঙ্ক নেই, যার ফলে অনেক প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিচ্ছে। আগে হাওরে প্রচুর খালি জমি ছিল, এখন নেই। পশুপাখিও কমে গেছে। আগে যেসব স্থানে জঙ্গল ছিল, সেগুলো এখন হারিয়ে গেছে। নগরায়ন দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যার ফলে পরিবেশ সংকট বাড়ছে।"

এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের পরিবেশগত পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। পানি অপচয় রোধ, বনভূমি রক্ষা এবং কৃষিজমি সংরক্ষণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে দেশ।

একটি মন্তব্য করুন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন