ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে
জাতিসংঘের উদ্বেগ, ইরানের হুমকি, ইসরায়েলের সমর্থন ও বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত কি আরও বাড়বে?![]() |
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেছেন যে, যদি এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা মানবজাতির জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। |
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। রবিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই সংঘাত "নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে" তা মানবজাতির জন্য "বিপর্যয়কর" পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
"একমাত্র সমাধান হলো শান্তি," মন্তব্য করে গুতেরেস ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, "আজ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি এমন একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রার উত্তেজনা বৃদ্ধি, যা ইতিমধ্যেই সঙ্কটের কিনারায় রয়েছে – এবং এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।" তিনি সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি উত্তেজনা প্রশমিত করার এবং জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা এমন এক সময়ে এলো, যখন গত ১৩ই জুন থেকে ইসরায়েল তেহরানের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এই আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা। ইসরায়েল যুক্তি দিয়েছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে তা তাদের রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামলার মাত্র দুই দিন আগে বলেছিলেন যে তিনি ইসরায়েলের এই আক্রমণে সমর্থন দেবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত তিনি "দুই সপ্তাহের মধ্যে" নেবেন। তবে, আকস্মিক এই হামলায় বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইরান ইতোমধ্যে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ চলমান সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সামরিক অভিযানের পর এক টেলিভিশন ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (যিনি বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন) এই হামলাগুলোকে "চমৎকার সাফল্য" হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি দাবি করেন, এতে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার "সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত ধ্বংস" ঘটেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
![]() |
রোববার ভোরে এক ঘোষণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছে। |
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে ইরান এটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল বলে অভিহিত করেছে এবং এর কড়া জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এই ঘটনাকে জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির একটি "গভীর লঙ্ঘন" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, "আজ সকালে যা ঘটেছে তা নিন্দনীয় এবং এর দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি বয়ে আনবে।" আরাঘচি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, "ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণকে রক্ষার জন্য সব ধরনের উপায় অবলম্বন করবে।" তার এই মন্তব্যে তেহরানের পক্ষ থেকে কঠোর পাল্টা ব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডস বাহিনী ওয়াশিংটনকে এমনভাবে জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তারা অনুশোচনা করতে বাধ্য হয়। এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমি প্রায়ই বলি: 'শক্তির মাধ্যমে শান্তি'। প্রথমে আসে শক্তি, তারপর শান্তি।" নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের নীতি "শক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা"র একটি পুনর্ব্যক্তকরণ।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
![]() |
মার্কিন যুদ্ধবিমান ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলেছে। |