বরিশালে স্ত্রী নির্যাতন সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে কম কোথায়
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা: দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বাড়ছে নির্যাতন, বিশেষ করে বরিশাল ও খুলনায়। জরিপের তথ্য এবং সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা।স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার হার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় তুলনামূলকভাবে বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ প্রতিবেদন ২০২৪’-এ এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এ বছরের মার্চে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি, যেখানে সিলেটে এর হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে, যেসব এলাকায় নির্যাতনের ঘটনা কম, সেখানেও এর মাত্রা উচ্চহারেই রয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও সঙ্গী বা স্বামীর হাতে শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন —এমন নারীর হার বরিশালে সর্বোচ্চ, প্রায় ৮২ শতাংশ। খুলনাতেও এর উচ্চহার দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে, সিলেটে এই হার সবচেয়ে কম, প্রায় ৭৩ শতাংশ, যা ঢাকাতেও একই। এছাড়াও, চট্টগ্রামে প্রায় ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫ শতাংশ, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
জরিপের সময় থেকে আগের ১২ মাসে এই ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন এমন নারীর হারও বরিশালে বেশি, ৫৭ শতাংশ। গত ১২ মাসে সবচেয়ে কম সহিংসতার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর নারীরা, এই হার ৪১ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৫৩ শতাংশ, রংপুরে প্রায় ৫৩ শতাংশ, খুলনায় প্রায় ৫২ শতাংশ, সিলেটে ৫০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৮ শতাংশ এবং ঢাকায় প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদন আরও বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রায় ৮১ শতাংশ নারী (জীবদ্দশায় অন্তত একবার) সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যেখানে দুর্যোগপ্রবণ নয় এমন এলাকায় এই হার ৭৪ শতাংশ। জরিপের আগের ১২ মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫৩ শতাংশ ও ৪৭ শতাংশ।
দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটে। এর পাশাপাশি, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের তীব্রতা বাড়ছে, যা পরোক্ষভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
চট্টগ্রামে প্রায় ৭৬ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই হার ময়মনসিংহে ৭৫ শতাংশ, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ।
দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুরুষেরা কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে থাকেন। এ সময় নারীর ওপর সংসারের কাজ ও পরিবারের সদস্যদের দেখভালের দায়িত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। কাজ করার দিক দিয়ে তিনি পরিবারপ্রধান হয়ে উঠলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর মতামত থাকে না।- দুর্যোগ–বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা
নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হার বেশ কম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই হার প্রায় একই রকম। যেমন, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হার মাত্র ৬ শতাংশ, যা চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ক্ষেত্রেও একই। ময়মনসিংহে এই হার সর্বনিম্ন, ৫ শতাংশ।
- ডিগ্রি পাস বা তার চেয়ে বেশি শিক্ষিত নারীদের মধ্যে, জীবদ্দশায় সহিংসতার শিকার হওয়ার হার ৬১ শতাংশ, এবং গত ১২ মাসে এই হার ৪২ শতাংশ।
- অন্যদিকে, যাদের কোনো শিক্ষা নেই, সেই নারীদের মধ্যে জীবদ্দশায় সহিংসতার শিকার হওয়ার হার ৮০ শতাংশ, এবং গত ১২ মাসে এই হারও ৪২ শতাংশ।
নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে পারবে। কৃষি, গরু-ছাগল পালন ইত্যাদি থেকে নারীর প্রচলিত কিছু আয় ছিল। সেসব আয়ের উৎস কমে যাচ্ছে। নারীর আয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত দেওয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব।- দুর্যোগ–বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা