ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা: মুমিনের দুটি অমূল্য গুণ
ইসলামে ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব ও মুমিনের জীবনে এর প্রভাব জানুন। কুরআন-হাদিসের আলোকে এই দুটি অমূল্য গুণের তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।ইসলামে ধৈর্য (সবর) ও কৃতজ্ঞতা (শুকর) দুটি এমন মহৎ গুণ, যা একজন মুমিনের জীবনে শান্তি, তৃপ্তি ও সফলতা এনে দেয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে এই দুটি গুণ ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিপদে ধৈর্য ধরা এবং সুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা – এই দুটিই আল্লাহ তায়া'লার প্রতি বান্দার আনুগত্যের পরিচায়ক।
ধৈর্য: পরীক্ষার কঠিন পথে মুমিনের পাথেয়
ধৈর্য হলো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অবিচল থাকা, হতাশা বা অস্থিরতা প্রকাশ না করা। ইসলামে ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে ধৈর্যের কথা বলেছেন এবং ধৈর্যশীলদের জন্য মহাপুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।
কেন ধৈর্য প্রয়োজন?
- পরীক্ষার অংশ: জীবনটাই একটি পরীক্ষা। দুঃখ, কষ্ট, অভাব, অসুস্থতা – এ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে বানিন্দের পরীক্ষা। এসব মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করাই মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, "আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমালের ক্ষতি ও ফল-ফসলের স্বল্পতা দিয়ে পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।" (সূরা বাকারা: ১৫৫)
- মানসিক শান্তি: যখন মানুষ বিপদে ধৈর্য ধারণ করে, তখন তার মন শান্ত থাকে। সে জানে, আল্লাহ তার সাথে আছেন এবং প্রতিটি কষ্টের পরই স্বস্তি আসে।
- গুনাহ মাফ: বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
- জান্নাতের পথ: ধৈর্যশীলদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলদের পুরস্কার দান করেন।"
- কৃতজ্ঞতা: আল্লাহর নেয়ামতের স্বীকারোক্তি
কৃতজ্ঞতা হলো আল্লাহর দেওয়া অসংখ্য নেয়ামতের জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করা। আমরা এমন অনেক নেয়ামত ভোগ করি যা আমরা উপলব্ধিও করি না – সুস্থ শরীর, আশ্রয়, খাবার, পরিবার, নিরাপত্তা – সবকিছুই আল্লাহর দান। এই নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ওয়াজিব।
কেন কৃতজ্ঞতা প্রয়োজন?
- নেয়ামত বৃদ্ধি: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আল্লাহ তা'য়ালা নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, "যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেবো।" (সূরা ইবরাহীম: ৭)
- আল্লাহর সন্তুষ্টি: যখন বান্দা আল্লাহর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তখন আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
- হৃদয়ের প্রশান্তি: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মানুষকে অহংকার ও লোভ থেকে দূরে রাখে। এটি অন্তরকে প্রশান্তি দেয় এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনার জন্ম দেয়।
- পরকালের পুরস্কার: দুনিয়াতে কৃতজ্ঞ বান্দারা পরকালেও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবে।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার সহাবস্থান
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা একে অপরের পরিপূরক। যখন মানুষ সুখে থাকে, তখন তার উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া। আর যখন সে বিপদে পড়ে, তখন তার উচিত ধৈর্য ধারণ করা। প্রকৃত মুমিন সে-ই, যে উভয় অবস্থায়ই আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল থাকে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "মুমিনের অবস্থা কতই না আশ্চর্যজনক! তার সমস্ত ঘটনাই তার জন্য কল্যাণকর। যদি তাকে কোনো সুখ স্পর্শ করে, সে শুকরিয়া আদায় করে, আর তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তাকে কোনো কষ্ট স্পর্শ করে, সে ধৈর্য ধারণ করে, আর তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।" (সহীহ মুসলিম)
এই হাদিসটি মুমিনের জীবনদর্শনের মূল ভিত্তি। জীবনে উত্থান-পতন আসবেই। কিন্তু ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার মতো দুটি অমূল্য গুণ ধারণ করে একজন মুমিন আল্লাহর সাহায্য ও সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হতে পারে। এই গুণগুলোই তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।